‘প্রত্যাবর্তনের লজ্জা’ কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

'প্রত্যাবর্তনের লজ্জা'

30
Advertisement

‘প্রত্যাবর্তনের লজ্জা’ কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

প্রিয় শিক্ষার্থীরা নিচে ‘প্রত্যাবর্তনের লজ্জা’ কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়া হলো। আশা করি তোমরা উপকৃত হবে।

‘প্রত্যাবর্তনের লজ্জা’

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

১. ‘আর আমি মাকে জড়িয়ে ধরে আমার প্রত্যাবর্তনের লজ্জাকে ঘষে ঘষে তুলে ফেলবো।’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: ‘আর আমি মাকে জড়িয়ে ধরে আমার প্রত্যাবর্তনের লজ্জাকে ঘষে ঘষে তুলে ফেলবো’- বলতে বোঝানো হয়েছে, মায়ের সান্নিধ্যে কবি তাঁর সকল প্রকার হতাশা, বেদনা-ব্যর্থতা-লজ্জা ভুলে গিয়ে পরম শান্তি লাভ করবেন।

শহরে যাওয়ার শেষ ট্রেন ধরতে ব্যর্থ হয়ে একরকম পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে কবি বাড়ির পথে পা বাড়ান। তাঁর মনে পড়ল বাবা-মায়ের সচেতনতামূলক কথাগুলো। মনে পড়ল ভাই-বোনের সতর্ক প্রস্তুতির কথা। লজ্জায় তাঁর হৃদয় ভারী হয়ে উঠল। কিন্তু তাঁর এই ফিরে আসায় মা আনন্দিত হলো। মাকে জড়িয়ে ধরে সমস্ত লজ্জা কোথায় যেন হারিয়ে গেল।

২. ‘দারুণ ভয়ের মতো ভেসে উঠবে আমাদের আটচালা’-কবির এ অনুভূতির কারণ কী?

উত্তর: ‘দারুণ ভয়ের মতো জেগে উঠবে আমাদের আটচালা’- পঙক্তিটির মধ্য দিয়ে কবির অপ্রত্যাশিত প্রত্যাবর্তনের লজ্জার দিকটির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

কবি শেষ রাতের ট্রেন ধরতে না পেরে নতমুখে গ্রামে ফিরে আসেন। ফেরার পথে গ্রামের প্রকৃতির মাঝে তিনি নিজের ব্যর্থতা লক্ষ করেন।  আবার পরিচিত নদী, জলার ধারে বকের ঝাঁক উড়ে যাওয়ার মতো দৃশ্য কবির দৃষ্টিগোচর হয়। নদী ও গ্রামের নৈসর্গিক সৌন্দর্য কবিকে সম্ভাষণ জানায়। পরিচিত পরিবেশে কবি আশ্বস্ত হয়ে ওঠেন। গ্রামের অনবদ্য পড়ক্তির আকর্ষণে নিজেকে আবার জাগিয়ে তোলার অনুপ্রেরণা খোঁজেন। কিন্তু ঘরে ঢোকার মুহূর্তে কবির মনে কিছুটা জড়তামিশ্রিত ভয় জেগে ওঠে। এ ভয় মূলত পরিবারের লোকজন তার প্রত্যাবর্তনকে কীভাবে নেবে সেই চিন্তাগত।

৩. ‘আর আমি এদের ভাই’- কথাটি কোন প্রসঙ্গে, কেন বলা হয়েছে?

উত্তর: ‘আর আমি এদের ভাই’- কথাটির মাধ্যমে কবি ট্রেন ধরতে না পারায় অন্য ভাই-বোনদের সঙ্গে তুলনা করে নিজের অসচেতনতা সম্পর্কে ইঙ্গিত দিয়েছেন।

কবি সঠিক সময়ে স্টেশনে পৌছাতে না পেরে ট্রেন ধরতে ব্যর্থ হন। অবশেষে নত মুখে বাড়ি ফিরে আসেন। ফেরার পথে অন্য ভাই-বোনদের কথা মনের কোঠরে জেগে ওঠে। জাহানারা কখনো ট্রেন ফেল করে না। ফরহাদ আধ ঘণ্টা আগেই স্টেশনে পৌঁছে যায়। লাইলী মালপত্র তুলে দিয়ে আগেই টিকিট কিনে রাখে। নাহার কোথাও যাওয়ার কথা থাকলে আনন্দে ভাত খাওয়াও ভুলে যায়। অথচ কবি এদের ভাই হয়েও ট্রেন ফেল করেন।

৪. প্রত্যাবর্তকের মুখ পরাজিতের মতো কেন?

উত্তর: ট্রেন ধরার জন্য নির্ধারিত সময়ে কবি স্টেশনে পৌছাতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রত্যাবর্তকের মুখ পরাজিতের মতো।

কবি যখন ট্রেন ধরার ক্ষেত্রে গড়িমসি করে ঘুমিয়ে পড়ছিলেন তখন তাঁর মা-বাবা সন্দেহ পোষণ করেছিলেন যে, তিনি সঠিক সময়ে স্টেশনে পৌছাতে পারবেন না। তাদের সন্দেহকে সত্য প্রমাণিত করে নিজের পরাজয় স্বীকার করে কবি নত মস্তকে আবার গ্রামের আটচালা ঘরের দিকে পা বাড়ান। ফলে তাঁর প্রত্যাবর্তন অনেকটা পরাজিতের আবহ তৈরি করে।

৫. ‘নির্লজ্জের মতোন হঠাৎ লাল সূর্য উঠে আসবে।’- পঙক্তিটিতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: ‘নির্লজ্জের মতোন হঠাৎ লাল সূর্য উঠে আসবে।’- পঙ্ক্তিটির মধ্য দিয়ে কবির ট্রেন ধরতে না পারা ও বাড়ি ফেরার দৃশ্যের লজ্জামিশ্রিত দিকটির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

কবি শেষ ট্রেন ধরতে ব্যর্থ হয়ে এক অখ্যাত স্টেশনে বিহ্বল হয়ে কুয়াশায় কাঁপতে থাকেন। এরপর ধীরপায়ে গ্রামের বাড়ির দিকে প্রত্যাবর্তন করেন। ফেরার পথে শীতের কুয়াশায় তাঁর পাজামা ভিজে যায়। একসময় ভোর হয়ে এলে, পূর্বাকাশে সূর্য জেগে ওঠে। কবির ভাবনায় নির্লজ্জের মতো সূর্য উঠে আসবে। অর্থাৎ কবির ‘প্রত্যাবর্তনের লজ্জা রাতের আঁধারে ঢাকা ছিল। কিন্তু নির্লজ্জের মতো সূর্য উঠে কবিকে লজ্জায় ফেলে দিয়েছে।

৬. ‘কুয়াশার শাদা পর্দা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: ‘কুয়াশার শাদা পর্দা’ বলতে মনোজগতের দুশ্চিন্তাচ্ছন্ন পরিস্থিতিকে বোঝানো হয়েছে।

শীতের প্রকৃতি কুয়াশায় আবৃত থাকে। কখনো কখনো এমন কুয়াশা ঝরে যে চারপাশের ঘরবাড়ি, গাছপালা কিছুই দেখা যায় না। কুয়াশার গায়ে আবরণ ভেদ করে সূর্যালোকও পৌঁছাতে পারে না। কবির মনোজগতও শহরে যেতে না পারার ব্যর্থতায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। হতাশাগ্রস্ত কবির চিন্তাজগৎ কুয়াশা দিয়ে বোঝানো হয়েছে। কবি শেষ ট্রেনে শহরে যেতে না পেরে শীতের গাঢ় কুয়াশায় দুশ্চিন্তা নিয়ে গ্রামের আটচালা ঘরে প্রত্যাবর্তন করেন।

৭. ‘এক অখ্যাত স্টেশনে কুয়াশায় কাঁপছি।’- কথাটি বুঝিয়ে লেখো।

উত্তর: ‘এক অখ্যাত স্টেশনে কুয়াশায় কাঁপছি।’- বলতে শেষ রাতের ট্রেন ধরতে না পারায় কবির করুণ অবস্থা বোঝানো হয়েছে।

কবি ট্রেন ধরার জন্য সময়মতো স্টেশনে পৌছাতে পারেননি। সাত মাইল পথ হেঁটে স্টেশনে এসে দেখেন করুণ হুইসুল দিয়ে ট্রেন স্টেশন ছেড়ে যাচ্ছে। হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া কবির আর কোনো উপায় ছিল না। গ্রামের অখ্যাত একটা রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে তিনি শীতের কুয়াশায় কাঁপছিলেন।

৮. ‘গোছাতে গোছাতেই তোর সময় বয়ে যাবে’-কথাটি বলার কারণ কী? বুঝিয়ে লেখো।

উত্তর: কবি শম্বরে যাওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে বেশি সময় অপচয় করায় তাঁর বাবা প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছিলেন।

কবি শহরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলেও তাঁর মাঝে তেমন ব্যস্ততা দেখা যায় না। তিনি শেষ ট্রেনে চড়ে শহরে যাওয়ার পরিকল্পনা করেও গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার তীব্র তাগিদ অনুভব করেন না। ফলে যাত্রার প্রস্তুতির সময় তাঁর নিদারুণ আলস্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অন্তরের তাগাদা ছিল না বলেই কবি জিনিসপত্র গোছাতে দেরি করেন। তাঁর ঔদাসীন্য দেখে বাবা ঠিকই বুঝে ফেলেন ছেলে ট্রেন ধরতে পারবে না। এজন্যই কবির বাবা প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছিলেন।

৯. ‘এক নিঃস্বপ্ন নিদ্রায় আমি নিহত হয়ে থাকলাম।’- পঙক্তিটির তাৎপর্য কী? বুঝিয়ে লেখো।

উত্তর: প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিটিতে গভীর নিদ্রার কারণে কবির ট্রেন ধরতে না পারার দিকটি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

যে রাতে কবির ট্রেনে শহরে পৌঁছানোর কথা, সে রাতে তিনি সময়মতো ঘুম থেকে উঠতে পারেননি। কবির মা তাঁকে বহু রাতের মতো বই নিয়ে জেগে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু কবির খুব ঘুম পেল। তিনি গভীর নিদ্রার কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। আলোচ্য পঙক্তিটির মধ্য দিয়ে এ বিষয়টি ফুটে উঠেছে।

‘প্রত্যাবর্তনের লজ্জা’ কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

১০. ‘প্রত্যাবর্তনের লজ্জা’ কবিতার কেন্দ্রীয় বিষয় কী?

উত্তর: কবিতার মূল বিষয় হলো শহরে যাওয়ার শেষ ট্রেনটি ধরতে না পারার পর যে হতাশা এবং পরাজয়ের অনুভূতি কবি অনুভব করেন, তারপর গ্রামে ফিরে এসে মায়ের কাছে শরণ নেয়ার মাধ্যমে সেই পরাজয়ের লজ্জা অতিক্রম করা। কবি শহরের জটিল জীবন থেকে মুক্তি পেতে চান এবং গ্রামে ফিরে এসে শান্তি অনুভব করেন, যা তার জন্য পরম স্বস্তির। মায়ের কাছে ফিরে এসে তিনি নিজের ব্যর্থতা ভুলে যান এবং শান্তি পান।

১১.”হতাশার মতোন হঠাৎ দারুণ হুইসেল দিয়ে গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে।” ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: আলোচ্য পঙ্কতিটিতে কবির ট্রেন ফেল করার বিষয়টিকে হতাশার সাথে তুলনা করা হয়েছে।

‘প্রত্যাবর্তনের লজ্জা’ কবিতাটি একজন ট্রেন যাত্রীর ট্রেন ধরতে না পারার ব্যর্থতার বর্ণনা। কবি রাতের শেষ ট্রেন ধরবে বলে সাত মাইল পারি দিয়ে অখ্যাত এক স্টেশনে পৌঁছায়। কিন্তু স্টেশনে পৌঁছানোর আগেই স্টেশনে জ্বলে ওঠে ট্রেন ছাড়ার সংকেত। এক প্রকার ছুটতে ছুটতে এসেও কবি ট্রেনটা মিস করে। ফলে ট্রেন ধরতে না পারার আক্ষেপকে হতাশার মতো চলে যাওয়ার সাথে তুলনা করেছেন কবি।

১২. শহরে যাওয়ার ট্রেনটি ধরতে না পারার পর কবির কী অনুভূতি হয়?

উত্তর: কবি ট্রেনটি ধরতে না পারার পর গভীর হতাশায় ভুগেন। তার মনে হয়, সময় পেরিয়ে গিয়েছে এবং তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি যখন স্টেশনে পৌঁছান, তখন ট্রেন চলে গেছে এবং তার সঙ্গে শহরে যাওয়ার কথা ছিল এমন মানুষদের মুখ তার চোখে পড়ে, যারা তাকে জানালা দিয়ে সান্ত¡না দিচ্ছে। এই অনুভূতি কবির জন্য একপ্রকার পরাজয়ের গ্লানি এবং অবিশ্বাস্য হতাশার সৃষ্টি করে।

‘প্রত্যাবর্তনের লজ্জা’ কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

১৩. “কুয়াশার শাদা পর্দা দোলাতে দোলাতে আবার আমি ঘরে ফিরবো-ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : ৬ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দেখো।

১৪. কবি মা-বাবার কথাগুলি কীভাবে মনে করেন?

উত্তর: কবি তার মায়ের কথাগুলি মনে করেন যখন তিনি ট্রেনটি ধরতে না পারার পর হতাশ হন। তার মা বলেছিলেন, “আজ রাত না হয় বই নিয়ে বসে থাক,” যা তাকে কিছুটা শান্তি দেয়। পাশাপাশি, তার বাবা তাকে বারবার তাড়না দিয়েছিলেন, বলেছিলেন যে সময় চলে যাবে, কিন্তু তিনি আবার গাড়ি পাবেন। এসব কথাগুলি কবির মনে আশার সঞ্চার করে, যদিও শেষ পর্যন্ত ট্রেন চলে গেছে।

১৫. “শিশিরে আমার পাজামা ভিজে যাবে- এই চরণ দ্বারা কী বোঝায়?

উত্তর: এই চরণের মাধ্যমে কবি তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বর্ণনা করছেন। শিশিরে পাজামা ভিজে যাওয়া এক ধরনের স্নিগ্ধতা এবং শীতলতার অনুভূতি তৈরি করে, যা তার ঘরে ফেরার পথে এক ধরনের শান্তি এবং নবজীবনের প্রতীক হিসেবে কাজ করে। এটি তার ফিরে আসার অনুভূতির সাথে সম্পর্কিত।

১৬. “স্টেশনে পৌছে দেখি নীলবর্ণ আলোর সংকেত”- বুঝিয়ে লেখো।

উত্তর: আলোচ্য পঙ্ক্তিতে কবির ট্রেন ধরতে না পারার ব্যর্থতার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

আল মাহমুদের ‘প্রত্যাবর্তনের লজ্জা’ কবিতায় প্রকাশিত হয়েছে এক ট্রেন যাত্রীর শেষ ট্রেন ফেল করার বিড়ম্বনা। কবি রাতের শেষ ট্রেন ধরবেন বলে সাত মাইল হেঁটে স্টেশনে আসেন। এক প্রকার ছুটতে ছুটতে আসলেও স্টেশনে পৌঁছানোর আগেই নীলবর্ণের আলোর সংকেত। অর্থাৎ ট্রেন ছাড়ার সংকেত জানিয়ে ট্রেন ছেড়ে দেয়। ফলে কবির সব চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। আলোচ্য পঙ্ক্তিতে কবির সেই হতাশাই প্রকাশিত হয়েছে।