‘রেইনকোট’ গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

1680
Advertisement

  ‘রেইনকোট’ গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ তোমাদের অনুশীলনের জন্য ‘রেইনকোট’ গল্প থেকে অনুধাবনমূলক কয়েকটি প্রশ্নের নমুনা উত্তর নিচে তুলে ধরা হলো:

১। ‘ আব্বু ছোটমামা হয়েছে’— ছোট মেয়ের এ উক্তিতে প্রফেসর কেন চমকে ওঠেন?
উত্তরঃ ‘ আব্বু ছোটমামা হয়েছে’— ছোট মেয়ের এ উক্তিতে প্রফেসর চমকে ওঠেন, কারণ তিনি ভেবেছেন তার শ্যালক মিন্টু আবার অস্ত্রশস্ত্র হাতে ঘরে ঢুকে পড়ল কিনা।
প্রফেসর নুরুল হুদার শ্যালক মিন্টু একজন মুক্তিযোদ্ধা। সেদিন বৃষ্টি থাকায় কলেজে যাওয়ার সময় শ্যালকের রেইনকোট গায়ে দেন নুরুল হুদা। তা দেখে তার ছোট মেয়ে তাকে বলে যে সে ছোট মামা হয়েছে। মেয়ের মুখে এ কথা শুনে তিনি চমকে ওঠেন। কারণ তিনি ভেবেছেন অস্ত্রশস্ত্র হাতে মিন্টু এসেছে। আর মিন্টু আসার অর্থ হলো তাকে ধরার জন্য বাড়িতে মিলিটারির আগমন।

২। ‘এগুলো হলো পাকিস্তানের শরীরের কাঁটা’— উক্তিটি বুুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ শহীদমিনার সম্পর্কে পাকিস্তানি মিলিাটারির বড় কতার্দের ধারণা দিতে গিয়ে উক্তিটি করেন প্রিন্সিপ্যাল সাহেব।
প্রিন্সিপ্যাল ডক্টর আফাজ আহমদ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দোসর হিসেবে কাজ করতেন। নানা বুদ্ধি—পরামর্শ দিয়ে তিনি তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করতেন। তিনি জানতেন দেশের শহীদমিনারগুলো বাঙালির জাতীয় চেতনার প্রতীক। তাই তিনি পাকিস্তানি মিলিটারির বড় কতার্দের কাছে সবিনয়ে বলেছিলেন, “ পাকিস্তান যদি বাঁচাতে হয় তো সব স্কুল—কলেজ থেকে শহীদমিনার হটাও। এগুলো হলো পাকিস্তানের শরীরের কাঁটা।” উক্ত কথার মাধ্যমে তার দেশ ও জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার ঘৃণ্য দিকটি প্রকাশিত হয়েছে।



৩। নুরুল হুদা কেন বাসা পাল্টানোর জন্য হন্যে হয়ে লেগে গেলেন?
উত্তরঃ পাশের ফ্ল্যাটের এক মহিলা নুরুল হুদার স্ত্রীর কাছে মিন্টুর খোঁজ করলে ভীতু প্রকৃতির মানুষ নুরুল হুদা মিলিটারির ভয়ে বাড়ি পাল্টানোর জন্য হন্যে হয়ে লেগে যান।
কলেজশিক্ষক নুরুল হুদার শ্যালক মিন্টু মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছে। এ কারণে তার ভগ্নিপতির দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। আবার কেউ এসে মুক্তিযোদ্ধা মিন্টুর কথা জিজ্ঞাসা করতে পারে এ ভেবে তিনি বাসা পাল্টান। তারই সূত্র ধরে পাশের ফ্ল্যাটের এক মহিলা তার স্ত্রীর কাছে মিন্টুর কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি মিলিটারির ভয়ে বাড়ি পাল্টানোর জন্য তৎপর হয়ে ওঠেন। মিলিটারির আবির্ভাবের পর থেকে নুরুল হুদা চার বার বাসা পাল্টিয়েছেন।

৪। ‘রাশিয়ায় ছিল জেনারেল উইন্টার, আমাদের জেনারেল মনসুন।’ ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ ‘রাশিয়ায় ছিল জেনারেল উইন্টার, আমাদের জেনারেল মনসুন।’— এ কথাটি নুরুল হুদা স্টাফরুমে তার কোনো এক কলিগের মুখে শুনেছিলেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলার বাহিনী প্রচণ্ড শীতের কারণে রুশ বাহিনীর হাতে পরাস্ত হয়েছিল। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের প্রবল বষার্য় তেমনি বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পড়েছিল পাকিস্তানি বাহিনী। উক্তিটির মাধ্যমে সেই বিষয়টিরই তুলনা করা হয়েছে। কুলির ছদ্মবেশে কলেজে আলমারি দিতে এসে এক গেরিলা মুুক্তিযোদ্ধা বলেছিল ‘বষাকালেই তে জুৎ’। নুরুল হুদার মনে হয়, এ কথার মধ্য দিয়ে আলোচ্য কথাটিই বলতে চেয়েছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশের ছেলেরা বষার্র সঙ্গে পরিচিত থাকলেও পাকিস্তানি বাহিনীর তা ছিল না।



৫।  ইসহাককে দেখে সবাই তটস্থ থাকে কেন?
উত্তরঃ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে প্রিন্সিপালের পিয়ন ইসহাক বাংলা বলা ছেড়ে দিয়ে দিনরাত উদুর্তে কথা বলে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সে পাকিস্তানিদের পক্ষ অবলম্বন করে।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের ভয়ে বাঙালিরা সব সময় তটস্থ থাকত। পাকিস্তানের সমর্থক রাজাকার হলেই, সে যে শ্রেিণ— পেশারই হোক না কেন বাঙালির ওপর তার ক্ষমতার অপব্যবহার শুরু করে এবং সেই অপকর্মের মদদ দেয় পাকিস্তানি বাহিনী।‘রেইনকোট’ গল্পের প্রিন্সিপালের সামান্য পিয়ন ইসহাক উর্দু বলতে পারায় এবং পাকিস্তানের ঘোর সমর্থক রাজাকার হওয়ায় তার ভয়ে সবাই ভীত থাকত।
৬। ‘যেন বৃষ্টি পড়ছে মিন্টুর রেইনকোটের ওপর’ ব্যাখ্যা কর ।
উত্তরঃ মিক্তিযোদ্ধা শ্যালক মিন্টুর রেইনকোট গায়ে দেয়ার পর ভীতু নুরুল হুদার মধ্যে যে সাহসী চেতনা সঞ্চারিত হয় সে কথার প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে আলোচ্য উক্তিটিতে।
নুরুল হুদা ভীতু প্রকৃতির মানুষ। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা শ্যালকের রেখে যাওয়া রেইনকোট গায়ে দিয়ে কলেজে যাওয়ার সময় এই ভীতু নুরুল হুদার মধ্যে দেশপ্রেম ও সাহসী চেতনার স্ফূরণ ঘটে । মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আঁতাতের অভিযোগ এনে মিলিটারি নুরুল হুদার ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। তার ছোটখাট শরীরটাকে আঙটার সাথে ঝুলিয়ে দিয়ে তার গায়ে চাবুক দিয়ে নির্যাতন চালানো হয়। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আঁতাত রাখার অভিযোগে এবং দেশপ্রেমের চেতনায় নুরুল হুদা এতটাই উত্তেজিত বোধ করে যে চাবুকের বাড়িগুলো তার কাছে মনে হয় যেন স্রেফ উৎপাত ,যেন বৃষ্টি পড়ছে রেইনকোটের ওপর।মূলত মুক্তিযোদ্ধার রেখে যাওয়া রেইনকোটটি নুরুল হুদার মনে সাহসী চেতনার উদ্রেক করে।